শ্রীবাটীর জমিদার চন্দ্রদের পূজোবাড়ির প্রাচীন সাবেকী দূর্গাপূজো
বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপূজো।মা দূর্গা অর্থাৎ দেবী দশভূজা রূপে দেবীর আগমন সমগ্র মর্ত্তবাসিকে আনন্দিত করে তোলে।শ্রীবাটীর জমিদার চন্দ্র পরিবারের পূজোবাড়ির দেবী দূর্গার সাবেকী পূজা প্রাচীনতম নির্দশন।প্রায় 300 বছরের প্রাচীনতম এই পূজো নিষ্ঠা ও প্রথা এক ব্যাতিক্রম নির্দশন।জাগ্রত দেবীমূত্তির আলোর ঝলকানি সমগ্র পূজোমন্ডপকে সুশোভিত করে তোলে।রথের দিন দেবীর গায়ে মাটি দিয়ে শুরু হয় দেবীর্নিমানের পূর্ণযাত্রা। মহালয়ের পরদিন প্রতিপদের শুভলগ্নে দেবীর মন্দিরে ঘট প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে দেবীর পূজাপর্ব শুরু হয়। নিষ্ঠা ও ভক্তিসহকারে পঞ্চমী পর্যন্ত ঘটে পূজাপর্ব চলে।ষষ্ঠীতে বোধণ, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর শুভলগ্নে নানা প্রথা ও ভক্তিসহকারে পূজা চলে।মহাষ্টমীর সন্ধিপূজা এখানে বিশেষ আকর্ষণ। সন্ধিপূজায় মায়ের দেবীরূপে এক অপূর্ব ভক্তির মায়াআলোয় সমগ্র পূজোবাড়িতে আলোকিত করে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী
চালকুমড়ো ও আখ বলি প্রচলিত। সানাই ও ঢাকের সুর সমগ্র পূজোবাড়িকে মাতিয়ে তোলে। দশমীর যাত্রা নতুন পোশাকে সৌরভিত নীলকন্ঠ হাতে দেবীর বিদায়ের করুণ সুরধ্বনী চোখের জল আনে।সিন্দুর খেলা ও ঘট বিসর্জন পর্ব সমাপ্তির পর দেবীর নিরঞ্জন যাত্রা খুবই নিষ্ঠা সহকারে উদযাপিত হয়। আবার দেবীদর্শনের প্রতিক্ষার আশায় একবছরের অপেক্ষায় থাকে শ্রীবাটীর চন্দ্র পরিবার ও সমগ্র বিশ্ববাসী। শ্রীবাটীর পূজোবাড়ির দেবীমা ও প্রাচীনতম মন্দির কে দেখতে প্রতিনিয়ত বহু পর্যটক দেশ ও বিদেশ থেকে আগত হয় এই গ্রামে।
|
|
শ্রীবাটীর জমিদার চন্দ্রদের কুলদেবতা রঘুনাথ জিউ মন্দির
বিষ্ণুদেবের এক অবতর রূপে রঘুনাথ এর পূজো শ্রীবাটীর রঘুনাথ জিউ মন্দিরে বহু যুগতারে পূজিত হয়ে চলেছে।মূলত শ্রীবাটীর জমিদার চন্দ্র পরিবার আজ থেকে প্রায় 300 বছরের আগের সময়ে গুজরাট থেকে শ্রীবাটী আসার পর রঘুনাথ কে তাদের কুলদেবতা হিসাবে গ্রহন করেন। জন্ম থেকে মৃত্য পুর্যন্ত প্রায় প্রতিটি পর্ব জুড়ে রঘুনাথ তথা কুলেদবতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও পূজো নিবেদন করা হয়। প্রত্যকদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিত্যপূজো ও আরতীতে গ্রামের বহু মানুষ অংশগ্রহন করে। এ ছাড়াও চন্দ্রপরিবারের প্রতিটা পূজো শুরু হয় রঘুনাথ কে সমার্পণ করে। পূর্ণিমার দিন কুলদেবতা রঘুনাথ কে বহু মানুষ ভক্তিভরে পূজা অর্পণ করেন।জন্মাষ্টমীর দিন ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছরই নামসংকীত্তণ ও পূজোপার্বণ চলে। বহু মানুষের সমাগমে রঘুনাথ জিউ মন্দির হয়ে ওঠে আলোকউজ্বলিত। ।রঘুনাথ জিউ মন্দিরের সবথেকে বড় আকর্ষণ রামনবমী।রামনবমী উপলক্ষে দুইদিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পূজো অনুষ্ঠিত হয়।রামকে ও রঘুনাথকে কেন্দ্র করে আবীর রঙের রাঙায় রঙিন হয়ে ওঠে শ্রীবাটীর চন্দ্রপাড়ার রঘুনাথ মন্দির প্রাঙ্গণ। দুপুরবেলায় অন্নভোগ নিবেদন করা হয়; শ্রীবাটীর বহু মানুষ ভক্তিভরে ভোগ গ্রহন করে। রামনবমীকে কেন্দ্র করে উৎসবের পরিবেশের সৃষ্টি হয়।।জাগ্রত কুলদেবতা রঘুনাথজীকে সুরক্ষার ব্যাবস্থাহেতু স্থানীয় প্রশাসন সহ এলাকার স্থানীয় মানুষ অংশগ্রহন করেছে।
|
|
শ্রীবাটীর নিশীকালি মাআমাদের শ্রীবাটীতে দুর্গাপুজোর পর প্রথম অমাবস্যার রাতে কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয়।চর্তুভুজা, দিগম্বরী, শ্যামবর্ণা এই দেবীমূর্তি মুখমন্ডলা শোভিত। "নিশী" শব্দের অর্থ রাত বা অন্ধকার, শ্রীবাটীর দেবী নিশীকালির আর্বিভাব ঘটে
তমসা রজনীর মধ্যে।এলাকাবাসীর কাছে প্রচলিত এই দেবী খুবই জাগ্রত, নিষ্ঠা ও ভক্তি ভরে দেবীর পুজো চলে।।প্রথমে দেবীর আদি মন্দিরে আগমন ঘটে, নিশিরাতে দেবীর মূল মন্দিরে আগমন ঘটে।।ও সারা নিশিরাত ব্যাপী পুজো হওয়ার পরে উর্ষালগ্নের পূর্বে নিশীরাতেই দেবীর বিসর্জন হয় নিশব্দে নীরবে।।প্রতি অমাবস্যায় দেবীকে স্বরণ করে পূজোর আয়োজন হয়ে থাকে।।এলাকাবাসীর কাছে এই দেবী নিশিকালী দেবী রূপে পরিচিত ও সমৃদ্ধ হয়ে আসছে।।
|
|
শ্রীবাটীর গাজন উৎসব উজ্ঞা পনবাংলার লৌকিক উৎসবগুলির মধ্য অন্যতম হল শিবের গাজন।মূলত চৈত্র মাসের শেষের দিকে এই উৎসব আরম্ভ হয়।সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্রীবাটী গ্রাম হয় ওঠে আলোকউজ্বল ।সন্ন্যাসীদের কঠোর তপস্যা ও নিষ্টা সহকারে বিভিন্ন প্রথা উদযাপন করে।ঠাকুর নিয়ে গ্রাম পরিক্রমা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেবদর্শন করে দেওয়ার সুযোগ ভক্তির টানে ভক্তবৃন্দকে আলোড়িত করে তোলে।নীলপূজকে কেন্দ্র করে মন্দির চত্বরে বহু ভক্তবৃন্দ উপবাস সহকারে দেবসাধনায় পূজো-অর্চনা করে থাকে।সন্ন্যাসীদের বাণ ফোরানো এক প্রাচীন প্রথা যাকে কেন্দ্র করে বহু দর্শকের আগমন ঘটে।।শ্রীবাটীর গাজন বাংলার সামাজিক উৎসবগুলির মধ্য অন্যতম।গাজন শেষে চড়ক উৎসবের আনন্দকে এক নতুন মাত্রা নিয় আসে। এই উৎসবগুলি সামাজিক বন্ধনগুলিকে আরও দৃঢ় চরে তোলে।।
|
|
শ্রীবাটীর বাবা পঞ্চানন পূজা (পঞ্চাননতলা)
দেবাদীদেব মহাদেবের আর এক নাম পঞ্চানন।প্রতিবছর বাংলার 1 লা মাঘ বাবা পঞ্চাননের পূজো আয়োজিত হয়।শ্রীবাটীর পঞ্চানন তলায় অশ্বথবৃক্ষের চারদিকে পঞ্চানন পূজো চলে।এই উৎসব বাংলার অন্যতম উৎসব।শ্রীবাটী গ্রামের বাবা পঞ্চাননের পূজোয় সমাজের সকল স্তরের মানুষ অংশগ্রহন করে।পূজোকে কেন্দ্র করে ছাগ্ বলি প্রথা প্রচলিত আছে।পূজোর শেষে অন্নভোগবিতরণ চলে। যা সমাজের সকল মানুষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে গ্রহন করে।।পূজোকে কেন্দ্র করে গ্রামে উৎসব ও আনন্দে মেতে ওঠে।।
|
|
শ্রীবাটীর পোড়োবাবার শিবরাত্রি পূজা
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী রাত্রি।হিন্দু মতানুসারে উপবাসী এক ব্যাধকে এদিন শিব কৃপা করেছিল।শিবের কৃপা পাওয়ার জন্য এই ব্রত আজও পালিত হয়। শ্রীবাটীর পোড়োবাবার শিবরাত্রি বহু প্রাচীন সময় থেকে হয়ে আসছে।প্রচলিত আছে কোনো এক সময় মন্দিরটি পূজো অর্চনা বন্ধ হয়ে যায়, চারিদিকে ঝোপঝাড় ও জঙ্গল মন্দির কে আবৃষ্ট করে।কোনো এক দিন মহাদেবের স্বপ্নাদেশে মন্দিরে পূজা অর্চনা শুরু হয়, মন্দির নবরূপ পায়, সেইথেকে জাগ্রত এই মন্দিরের মহত্ব দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে এখানে দেবাদিদেব পোড়োবাবা নামে পরিচত।। প্রতিদিন নিত্যসেবা ও পূজা হয়।শিবরাত্রি 3/4 দিন জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্টানে মধ্য দিয় উদযাপন করা হয়।।শিবরাত্রির উপলক্ষে বাবার মাথায় জল নিবেদন প্রচলিত।ভক্তবৃন্দগণ সূদর দাঁইহাটের গঙ্গাবক্ষ থেকে নিষ্টাও ভক্তি সহকারে পায়ে হেঁটে বাঁক ও মাটির পাত্র দ্বারা জল এনে ব্রাহ্মণী নদী পেরিয়ে বহু গ্রাম পরিক্রমা করে শ্রীবাটীর পোড়োবাবার মাথায় জল নিবেদন করেন।নারী-পুরুষ সমাজের সকল স্তরের মানুষ অংশগ্রহন করে।সারা রাত্রিব্যাপী পোড়োবাবার পূজো চলে।।
একটি জাগ্রত ও ঐতিহাসিক মন্দির রূপে পোড়োবাবার পূজিত হয়ে আসছে। এটা আমাদের শ্রীবাটীর অন্যতম গোউরবময় এক দৃশানত.
|
|
শ্রীবাটীর চড়ক উৎসব*
উৎসব মানেই আনন্দ, ও মৈত্রী বন্ধনে মানবতার একাত্ববোধ।চৈত্র মাসের শেষ দিন , বাংলা বছরের শেষ দিন ,চৈত্র সংক্রান্তিতে হয় চড়ক।চড়কে কেন্দ্র করে বাংলার বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে।পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার শ্রীবাটী গ্রামে বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্য উৎসব চড়ক মেলা।মহাদেবের গাজন শেষে চড়ক আর চড়কে মিলিত হয় প্রতিবেশী গ্রাম সিঙ্গি ও বাকসার গাজনের নীলকন্ঠদেব।শুধু ভগবান আর সন্ন্যাসীবৃন্দ নয়, মিলিত হয় কয়েক হাজার মানুষের মন। প্রতিবেশী গ্রাম থেকে বহু মানুষ উৎসবে সামিল হয়।।কয়েক ঘন্টার মেলা হয়ে ওঠে মিলনক্ষেত্র। জাতি, ধর্ম, বর্ণ র্নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ অংশগ্রহন করে।হিন্দু ও মুসলীম দুই সম্পদায়কে ঐক্যবদ্ধ করে সহযোগীতায় এক নিবীড় পরিবেশের সৃষ্টি করে।।প্রতিবেশী গ্রামগুলির মধ্য এক বন্ধন লক্ষ্য করা যায়।।চড়ক গাছের পাক খাওয়া সন্ন্যাসীদের মধ্য এক ঐতিহ্য প্রথা। বাকসা গ্রামের সন্ন্যাসী ও সিঙ্গীর সন্ন্যাসীদের আমন্ত্রন ও সৌভাতৃত্ববোধের বিরল বন্ধনের পরিরূপ যা চড়ক উৎসবকে সর্বজনীন করে তোলে।।
|
|
উনবিংশ শতাব্দীর সেরা সুরক্ষিত বাংলা পোড়ামাটির মন্দির
কমপ্লেক্সগুলির মধ্যে শ্রীবতীর আবাস রয়েছে। [৪] [৫] কমপ্লেক্সটিতে শিব-লিঙ্গ নামে তিনটি মন্দির রয়েছে, যার নাম রয়েছে: শ্রী বিশ্ববেশারা (কালো পাথরের তৈরি), শ্রী ভোলানাথ (সাদা মার্বেলের তৈরি), এবং শ্রীচন্দ্রেশ্বর (কালো পাথরের তৈরি)। |
|