চন্দ্র বংশ শ্রীবাটি
বনেদি বাড়ির সাবেকি পুজো
শ্রী শব্দটির অর্থ হল ঐশ্বর্য/সম্পদ/সৌন্দর্য/সুন্দর। বাটী শব্দটির অর্থ হল বাড়ি/আবাসস্থল।অথাৎ শ্রীবাটী কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল-সুন্দর বাড়ি বা সৌন্দর্য সমৃদ্ধ আবাসস্থল।বর্ধমান জেলার একটা বেশ বর্ধিষ্ণু গ্রাম শ্রীবাটি।
পূর্ববর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তগত শ্রীবাটী গ্রামের ইতিহাস প্রায় 400 বছরের পূরোনো জমিদার চন্দ্র পরিবার শ্রীবাটী গ্রামে প্রথম বসবাস শুরু করেন।
পূর্ববর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার অন্তগত শ্রীবাটী গ্রামের ইতিহাস প্রায় 400 বছরের পূরোনো জমিদার চন্দ্র পরিবার শ্রীবাটী গ্রামে প্রথম বসবাস শুরু করেন।
মধ্যযুগে শ্ৰীবাটী বিখ্যাত ছিল চন্দ্ৰ-বংশের জন্য। ঘটনার প্রেক্ষাপট আজ থেকে আড়াই-তিনশ বছর আগের। নদী-বিধৌত শস্য-শ্যামলা বাংলায় তখন ভিড় জমাতে শুরু করেছে নানা জায়গা থেকে আসা ভাগ্যান্বেষীরা। সেই সময় নুনের ব্যবসা করতে বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিলেন এক দল ব্যবসায়ী। নুন সেই সময় খুবই মূল্যবান ব্যবসায়িক সামগ্রী, লাভজনক; তার উপর চন্দ্রদের ব্যবসা ছিল একচেটিয়া। কাটোয়ার গঙ্গার ধারে লবণগোলাই ছিল ব্যবসার কেন্দ্র। বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের উপকণ্ঠে কাটোয়ার তখন পর্তুগিজ, আরমানি, ইংরেজ বণিকদের ভিড়ে রমরমা অবস্থা। চন্দ্র পরিবার ক্রমশ ফুলেফেঁপে ওঠে। তাদের বাসস্থান ছিল তখন আর এক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর সপ্তগ্রামে।
মরাঠা বিপ্লবের সময় যখন সপ্তগ্রাম আক্রান্ত হয়, তখন এই শাণ্ডিল্য গোত্রীয় চন্দ্রবংশের কোন এক বংশধর কুলদেবতা শ্ৰীশ্ৰীরঘুনাথজিউ ঠাকুর সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান জেলার কৈথন গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে নানা অত্যাচারে উৎপীড়িত হয়ে স্বৰ্গীয় শোভারাম চন্দ্র জমিদারি কেনেন এবং ১১৬০ বঙ্গাব্দে কুলদেবতা ও পুরোহিত-সমভিব্যাহারে কাটোয়া থানার শ্ৰীবাটী গ্রামে উঠে আসতে বাধ্য হন। তখন থেকে শ্রীবাটীর উত্তরোত্তর ‘শ্রী’ বৃদ্ধি হতে থাকে। দান-ধ্যানে শ্রীবাটির জমিদার বাড়ির তখন বঙ্গদেশে খুব সুখ্যাতি। এদের কীৰ্ত্তি, নৈতিক শিক্ষা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিদ্যোৎসাহিতা, ব্যবসায়ের প্রসার সমস্ত কিছুতেই তখনকার সময়ে অতুলনীয়।
মরাঠা বিপ্লবের সময় যখন সপ্তগ্রাম আক্রান্ত হয়, তখন এই শাণ্ডিল্য গোত্রীয় চন্দ্রবংশের কোন এক বংশধর কুলদেবতা শ্ৰীশ্ৰীরঘুনাথজিউ ঠাকুর সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান জেলার কৈথন গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেখানে নানা অত্যাচারে উৎপীড়িত হয়ে স্বৰ্গীয় শোভারাম চন্দ্র জমিদারি কেনেন এবং ১১৬০ বঙ্গাব্দে কুলদেবতা ও পুরোহিত-সমভিব্যাহারে কাটোয়া থানার শ্ৰীবাটী গ্রামে উঠে আসতে বাধ্য হন। তখন থেকে শ্রীবাটীর উত্তরোত্তর ‘শ্রী’ বৃদ্ধি হতে থাকে। দান-ধ্যানে শ্রীবাটির জমিদার বাড়ির তখন বঙ্গদেশে খুব সুখ্যাতি। এদের কীৰ্ত্তি, নৈতিক শিক্ষা, দয়া-দাক্ষিণ্য, বিদ্যোৎসাহিতা, ব্যবসায়ের প্রসার সমস্ত কিছুতেই তখনকার সময়ে অতুলনীয়।
মূলত জমিদারী ও ব্যাবসা-বাণিজ্য ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। এখানকার বাড়িগুলি ছিল দর্শনীয়; আবাসস্থল উঁচু দেওয়াল বিশিষ্ট পোড়ামাটির ইঁট দ্বারা র্নিমিত। তৎকালীন জমিদারী ব্যাবস্থার নির্দশন আজও বর্তমান। বর্তমানে বাড়িগুলি কিছু সংস্কারে নবরূপ ধারণ করেছে ও কিছু সংস্কারের অভাবে ভগ্নপ্রায়। শ্রীবাটী অতীতের স্মৃতিবিজড়িত এক সমৃদ্ধশালী গ্রাম।
তৎকালীন র্নিমিত বাড়িগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য আজও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়, একটি ছাদে উঠলে সকল বাড়িগুলি পরিভ্রমণ করা যেত। এখনও কিছু বাড়িতে বিরাজমান। জমিদারী আমলে প্রায় প্রতিটা পরিবারে দূর্গাপূজো অনুষ্টিত হত; আজও পূজোমন্ডোপগুলি বর্তমান। চন্দ্ররা ছিলেন দেবাদিদেব শিবের উপাসক।বহু শিবমন্দির আজও বর্তমান। বাড়িগুলির কারুকার্য ও পোড়ামাটির সৌন্দয্য শ্রীবাটী গ্রামের নামকরণকে স্বার্থক করে তুলেছে।
তৎকালীন র্নিমিত বাড়িগুলির বিশেষ বৈশিষ্ট্য আজও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়, একটি ছাদে উঠলে সকল বাড়িগুলি পরিভ্রমণ করা যেত। এখনও কিছু বাড়িতে বিরাজমান। জমিদারী আমলে প্রায় প্রতিটা পরিবারে দূর্গাপূজো অনুষ্টিত হত; আজও পূজোমন্ডোপগুলি বর্তমান। চন্দ্ররা ছিলেন দেবাদিদেব শিবের উপাসক।বহু শিবমন্দির আজও বর্তমান। বাড়িগুলির কারুকার্য ও পোড়ামাটির সৌন্দয্য শ্রীবাটী গ্রামের নামকরণকে স্বার্থক করে তুলেছে।
শ্রীবাটির মন্দির তৈরি করেছিল চন্দ্র পরিবার। তারা নুনের ব্যবসা করে অনেক প্রতিপত্তি এবং সম্পত্তি করে। কাটোয়া শহরেও এদের বিশাল বাড়ি। বেশ অনেকগুলো বড়ো বড়ো পাকা বাড়ি গ্রামটায়। মন্দিরের কাছে পৌঁছনোর আগেই অতটা প্রত্যন্ত জায়গায় অতগুলো উনিশশতকীয় পাকা বাড়ি, বড়ো বড়ো থাম, বড়ো বড়ো জানলা – বেশ চমক লাগে একটা।
বিত্ত অর্জনের পাশাপাশি এই চন্দ্র পরিবার বিদ্যাচর্চার সংস্কৃতি ছিল। পরিবারের অনেকেই কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তন বা কেডি ইস্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। এই পরিবারের সদস্য সঞ্জয় চন্দ্র ছিলেন জেএনইউ-এর অধ্যাপক। সঞ্জয় চন্দ্র এবং মহাদেব চন্দ্র অনেক তথ্যাদি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। উনিশ শতকে চন্দ্র পরিবার সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষ হয়েও প্রতিপত্তি অর্জন করেছিলেন, তাঁরা অনেকেই নানারকম সমাজ ও ধর্মীয় কাজে যুক্ত ছিলেন।
শ্রীবাটি গ্রামের জমিদারের ঠাকুর বাড়ি লাগোয়া ৭ শতক জায়গার উপরপ্রায় চার বছর ধরে চন্দ্র পরিবারের জমিদারির আয় থেকে এবং ব্যবসার অর্থ থেকে ৩ লাখ ৯০ সিক্কা ব্যয়ে এই ২৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি পঞ্চরত্ন মন্দির সহ আরও দুটি মন্দির তৈরি করা হয়। তিনটে মন্দিরের গায়ে শাস্ত্রমতে বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি , পুরান কথার কাহিনি, রামকথা, কৃষ্ণলীলা, এমনকি মিথুন দৃশ্যের অবলম্বনে দৃষ্টি নন্দন টেরাকোটার কাজ কামারপাড়া, দিগনগর এলাকার বেশকিছু টেরাকোটা শিল্পী দিয়ে করানো হয় । মন্দিরের গায়ে দেব দেবীর মূর্তির সঙ্গে চামুণ্ডা কালী, মহিষমর্দিণী, জগধাত্রীর অপূর্ব মূর্তি শোভা দেখে বোঝা যায় চন্দ্র পরিবারে দুই সতীনের ইচ্ছার কথা। তবে মন্দির তৈরির কাজে শোনা যায় দাঁইহাটের ভাস্করদের সাহায্যও নেওয়া হয়েছিল।হুগলীর কাঁকড়াখুলির শিবমন্দি্রের কাজ করতে আসা মিস্ত্রির দলের সাহায্য নিতে হয়েছিল বলে জানা যায় ।বাংলার ১২৪৩ সালের ৩১শে জৈষ্ঠ্য ইংরাজির ১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে কাশীর পন্ডিত দিয়ে শাস্ত্রীয় মতে যজ্ঞ করে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। মন্দির স্থাপত্যের বিন্যাসে এখানকার মন্দির হল অষ্টকোণাকৃতি।এই মন্দিরের শরীর জুড়ে রয়েছে নজরকাড়া টেরাকোটার কাজ । তিন মন্দিরের দেবতারা হলেন ভোলানাথ, চন্দ্রেশ্বর ও শঙ্করশিব।আছে।এই ধরণের মন্দির রাজ্যে আরও আছে যেমন মেদিনীপুরের কালীগঞ্জের রাধাগোবিন্দের মন্দির, বর্ধমানের বনপাশ, বীরভূমের সুপুর, হুগলির কাঁকড়াখুলির শিবমন্দির, নবদ্বীপের পোড়ামাতলার ভবতারণ মন্দির, বীরভূমের চন্দ্রনাথ মন্দির এবং মেদিনীপুরের দুবদাহের রাধাদামোদরের মন্দির অষ্টকোণাকৃতি মন্দির স্থাপত্যের নিদর্শন। রাজ্য সরকারের প্রত্নতত্ত্ববিভাগ মন্দিরটিকে অধিগ্রহণ করে দায় সেরেছে , মন্দিরের সংরক্ষণ বা দেখভাল কিছুই হয় না।কাটোয়ার অন্যতম স্থাপত্য চোখের সামনে নষ্ট হতে বসেছে। শ্রীবাটির গ্রামের উদ্যমী যুবকরা মন্দির চত্বরের আগাছা পরিষ্কার করে । শ্রীবাটির জমিদার চন্দ্র পরিবারের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়।
হিতেশরঞ্জন সান্যালের "The Social Mobility in Bengal" গ্রন্থে এই মন্দিরনির্মাণের পিছনে তাঁদের মনস্তত্ত্বটি দিব্যি সুন্দর আলোচনা করা হয়েছে। মন্দিরগুলো উনিশ শতকের। তিনটে মন্দিরের একটা কমপ্লেক্স। এছাড়াও গ্রামটিতে আরো মন্দির আছে, তবে সেখানে টেরাকোটা অলংকরণ প্রায় নেই বললেই চলে। শ্রীলা খবর জোগাড় করেছিল যে চন্দ্রদের বাস্তুদেবতা রঘুনাথ শিলা একটি দালান মন্দিরে আছে। কিন্তু এই মন্দিরত্রয়ীর টেরাকোটা অলংকরণ অপূর্ব সুন্দর।
আমার বাংলা নিয়ে প্রথম কাজ করবার সুযোগ তৈরি হয়েছিল অভ্র^ নামক এক যুগান্তকারী বাংলা সফ্টওয়্যার হাতে পাবার মধ্য দিয়ে।
এর পর একে একে বাংলা উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ডপ্রেস বাংলা কোডেক্সসহ বিভিন্ন বাংলা অনলাইন পত্রিকা তৈরির কাজ করতে করতে বাংলার সাথে নিজেকে বেঁধে নিয়েছি আষ্টেপৃষ্ঠে। বিশেষ করে অনলাইন পত্রিকা তৈরি করতে ডিযাইন করার সময়, সেই ডিযাইনকে কোডে রূপান্তর করবার সময় বারবার অনুভব করেছি কিছু নমুনা লেখার। যে লেখাগুলো ফটোশপে বসিয়ে বাংলায় ডিযাইন করা যাবে, আবার সেই লেখাই অনলাইনে ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইংরেজিতে লাতিন Lorem Ipsum… সূচক নমুনা লেখা (dummy texts) থাকলেও বাংলা ভাষায় এরকম কোনো লেখা নেই। তাই নিজের তাগিদেই বাংলা ভাষার জন্য প্রথম নমুনা লেখা তৈরি করলাম, এ হলো বাংলা Lorem ipsum – কিন্তু তার অনুবাদ নয়। আমি একে নামকরণ করেছি: অর্থহীন লেখা!